
যারা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহারের পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ফিচার এক্সপ্লোর করতে পছন্দ করেন, তারা নিশ্চয়ই “কাস্টম রম” কথাটি একবার হলেও শুনে থাকবেন। কাস্টম রম কি এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এই ব্যাপারটি নিয়ে অ্যান্ড্রয়েড কমিনিউটিতে আলোচনার শেষ নেই।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এন্ড্রয়েড কাস্টম রম কি, এর ব্যবহার, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
অ্যান্ড্রয়েড কাস্টম রম কি, তা জানার আগে অ্যান্ড্রয়েড এর পরিচিতি ছোট করে জেনে রাখা উচিত। অ্যান্ড্রয়েড হলো গুগলের মালিকানাধীন অপারেটিং সিস্টেম যা স্মার্টফোন, ট্যাব, বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস ও স্মার্টওয়াচ এর জন্য তৈরি। এটি মূলত লিনাক্স কার্নেল এর মডিফাইড ভার্সন এর উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
মূলত কাস্টম রম এর ধারণা বা গল্প শুরু অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্ট থেকেই। অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্ট হলো গুগল দ্বারা মেইনটেইন করা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এর অফিসিয়াল রিপজিটরি, যার ফলে যেকেউ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের সোর্স কোড চাইলেই ডাউনলোড করে নিজের মত যেকোনো কাজে ব্যবহার করতে পারে।
অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্ট এর মূল লক্ষ্য হলো ডেভলপার ও নির্মাতাদের একটি ওপেন সোর্স ফ্রেমওয়ার্ক প্রদান করা, যা ব্যবহার করে তারা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোর মধ্যে সমন্বয়ে ঘটাতে সক্ষম প্রোডাক্ট তৈরী করতে পারে।
অ্যান্ড্রয়েড এর এই ওপেন সোর্স কোডসমুহ স্যামসাং, ওয়ানপ্লাস এর মতো বিভিন্ন স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে তাতে নতুন ফিচার, কাস্টমাইজেশন, অপটিমাইজেশন যুক্ত করে অ্যান্ড্রয়েডকে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আরো উত্তম করে তোলে।
কোম্পানির বাইরে স্বাধীন ডেভলপাররাও একই সোর্স কোড ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য ফিচারে ভর্তি অ্যান্ড্রয়েড এর বিভিন্ন সংস্করণ তৈরী করতে পারেন।
কাস্টম রম বনাম স্টক রম

নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন এর সাথে যে অপারেটিং সিস্টেম আগে থেকেই ইন্সটল করে দেওয়া থাকে, সেটিই হলো স্টক রম। মূলত অ্যান্ড্রয়েড এর ওপেন সোর্স কোড ব্যবহার করে নতুন ফিচার ও সুবিধা যুক্ত করে আলাদা ফ্লেভার যুক্ত করা হয় বলে একেকটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন একেক রকম সফটওয়্যারে চালিত বলে মনে হয়। যেমনঃ স্যামসাং ফোনসমুহ ওয়ান ইউআই ও ওয়ানপ্লাস এর ফোনসমুহ ওয়ানপ্লাস ওএস দ্বারা চালিত হবে। আবার শাওমি ফোনগুলো মিইউআই দ্বারা চালিত।
কাস্টম রম কি?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে কাস্টম রম হলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করেই নির্মিত বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য অ্যান্ড্রয়েডের বিভিন্ন সংস্করণ। মূলত সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণের ইউজার ইন্টারফেস আরো সুন্দর করতে বা নতুন ফিচার যুক্ত করতে কাস্টম রম তৈরী করা হয়। সুতরাং কাস্টম রম বলতে এন্ড্রয়েডে যা বুঝানো হয় তা হচ্ছে, থার্ড পার্টি ডেভলপার দ্বারা নির্মিত অপারেটিং সিস্টেম যেটা এন্ড্রয়েডের উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে। এতে বাড়তি কিছু ফিচার ও ডিজাইন বিষয়ক স্বাধীনতা থাকে।
বেশিরভাগ কাস্টম রম’ই একজন স্বতন্ত্র ব্যাক্তি মেইনটেইন করে থাকেন৷ তবে বর্তমানে অনেক কাস্টম রম মেইনটেইন করার কাজে টিমওয়ার্ক দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানিও কাস্টম রম ডেভলাপ করছে, যা ইতিমধ্যে আমাদের জানা হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি জনপ্রিয় কাস্টম রম হচ্ছে পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্স, লিনেজ ওএস, ইভল্যুশন এক্স প্রভৃতি।
কাস্টম রম এর সুবিধা
কাস্টম রম কি জিনিস তা তো আমরা জেনে গেলাম। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কাস্টম রমের কার্যকরিতা বা সুবিধা আসলে কতটুকু।
বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনগুলো মুক্তির ৩ বছর পর থেকে সাধারণত আর সফটওয়্যার আপডেট পায়না। সেক্ষেত্রে কাস্টম রম ব্যবহার করে ৭ বছর আগের অ্যান্ড্রয়েড ফোনকেও লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ১২ এর রুপ দেওয়া যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে কাস্টম ROM এর ডেভলপার সংখ্যা অসংখ্য হওয়ায়, প্রতিটি ডিভাইসের জন্যই কাস্টম রম বিদ্যমান।
আবার অধিকাংশ কাস্টম রমই কিন্তু ফ্রি ব্যবহার করা যায়। কাস্টম রম ব্যবহার করতে জোরপূর্বক আপনাকে কোনো ফি প্রদান করতে হয় না। যার ফলে চাইলেই অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীগণ তাদের ডিভাইস নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারে।
কাস্টম রম এর জনপ্রিয়তার মূল কারণ হচ্ছে স্টক রম আর কাস্টম রম এর মধ্যকার পারফরম্যান্স গ্যাপ। কাস্টম রমগুলোতে সাধারণ রম এর চেয়ে অনেক ভালো পারফরম্যান্স এর দেখা মিলে। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ না থাকার কারণে Custom ROM রম ব্যবহার করে অধিক স্মুথ এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যায়।
এসবের পাশাপাশি অধিকাংশ কাস্টম রমই কাস্টমাইজেশনে ভর্তি৷ যার ফলে প্রত্যেক ইউজারের হাতে থাকছে তার ডিভাইসকে নিজের ইচ্ছামত করে সাজানোর সুযোগ।
কাস্টম রম কথাটির সাথে সিপিইউ ওভারক্লকিং ওতপ্রোতভাবে উচ্চারিত হয়। কাস্টম রমের কাস্টম কার্নেলের কিছু প্যারামিটার পরিবর্তন করে স্মার্টফোনের সিপিইউ বা প্রসেসরের প্রসেসিং ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। অফিসিয়াল বা স্টক রমে প্রসেসরকে তার সর্বোচ্চ লিমিট পর্যন্ত নেওয়া হয়না, কারণ এতে ফোন অধিক গরম হয়ে যেতে পারে এবং হার্ডওয়্যারের ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়া কাস্টম রমের মাধ্যমে সিপিইউ আন্ডারক্লকিং করাও হয়। এর ফলে অনেক ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস বন্ধ করে দেয়া সম্ভব হয় যা অফিসিয়াল রমে করা যায়না।আন্ডারক্লকিং করলে ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
অনেকেই তাদের ফোনে থাকা এসডি কার্ডে অ্যাপ ইন্সটল করতে চায়। ফোনে কাস্টম রম ইন্সটল করা থাকলে এসডি কার্ডে অ্যাপ ইন্সটল করা অনেক সহজ। আবার কাস্টম রম এ অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ থাকেনা বলে ব্যাটারি লাইফের ক্ষেত্রেও উন্নতি লক্ষ্যণীয়।
কাস্টম রম এর অসুবিধা
কাস্টম রম এর সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত, আপনার ফোন যদি হয় খুবই সম্প্রতি কেনা, তাহলে কাস্টম রম থেকে দূরে থাকাই ভালো। কেননা কাস্টম রম ইন্সটল করার চেষ্টা করলে বা ইন্সটল করলে ফোনের ওয়্যারেন্টি নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়াও কাস্টম রম ইন্সটল করতে গিয়ে ছোটোখাটো কোনো ভুলের কারণেও কিন্তু আপনার প্রিয় ফোনটি অচল হয়ে যেতে পারে। আবার কাস্টম রম ইন্সটল করতে অবশ্যই ফোন ক্লিন ফ্ল্যাশ করতে হয়, যার ফলে ফোনে থাকা সকল তথ্য মুছে যায়। তাই প্রতিবার নতুন কাস্টম রম ইন্সটল করার আগে ব্যাকাপ নেওয়া কিছুটা বিরক্তিকর হয়ে যায়।
কাস্টম রম যেহেতু এক বা একাধিক উৎসুক ডেভলপার দ্বারা তৈরিকৃত, তাই কাস্টম রম ইন্সটলের পর ছোটোখাটো বাগ এর দেখা পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এসব ছোটখাটো সমস্যা যদি আপনার মাথাব্যাথার কারণ না হয়, তাহলে কাস্টম রম ব্যবহারে আপনার কোনো সমস্যা হবেনা।
সিপিইউ ওভারক্লকিং বা আন্ডারক্লকিং করার কারণে ফোনের ব্যালেন্স করা পারফরমেন্স পাওয়া যায়না। যেমন, ওভারক্লকিং এর ফলে ফোন গরম হয়ে যেতে পারে ও হার্ডওয়্যার নষ্ট হতে পারে। আবার আন্ডারক্লকিংয়ের কারণে ফোনে বিভিন্ন দরকারি নোটিফিকেশন আসা বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। যেমন ইমেইল নোটিফিকেশনের কথা চিন্তা করুন। ইমেইল অ্যাপ যদি ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস চালু না রাখতে পারে, তাহলে এটি আপনাকে নতুন ইমেইলের নোটিফিকেশন দিতে পারবেনা।